জন্ম নিবন্ধন আবেদন করুন [ধাপে ধাপে]

জন্ম নিবন্ধন আবেদন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া যা দেশের প্রতিটি শিশুর অধিকার এবং এটি এখন শিশুর নাগরিক অধিকার নিশ্চত করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পাসপোর্ট, ভোটার আইডি কার্ড ইত্যাদি সকল ধরনের সরকারি সেবা ও সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য জন্ম নিবন্ধন আবশ্যক। একজন শিশুর জন্মের পর জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করা উচিত এতে করে শিশুর পরিচয় ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত হয়।

বর্তমান সময়ে জন্ম নিবন্ধের সম্পর্কিত সকল সেবা অনলাইনকরণ করা হয়েছে। এর ফলে জন্ম নিবন্ধন যাচাই, জন্ম নিবন্ধন সংশোধন ও জন্ম নিবন্ধন আবেদন সহ সকল প্রকার সেবা পেতে আপনাকে অনলাইনের সাহায্য নিতে হবে। আমাদের ওয়েবসাইট jonmonibondhonjachai.com নাগরিকদের এসকল সেবা নিশ্চিত করে। ওয়েবসাইটি থেকে জন্ম নিবন্ধনের সকল সেবা আপনি বিনামূল্যে গ্রহণ করতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার জন্য যা কিছু প্রয়োজন

জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার আপনার অবশ্যই কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র বা নথিপত্র প্রয়োজন। এসকল নথিপত্র ছাড়া আপনি জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই এসকল নথিপত্র বা জিনিস আপনাকে প্রথমে সংরক্ষণ করতে হবে।

  • পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার বা ভোটার আইডি কার্ড নাম্বারঃ এটি আবশ্যিক। এটি ছাড়া আপনি জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবেন না। যদি আবেদনকারীর বয়স ২০০০ সালের পরে হয় তাহলে পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন নাম্বারের প্রয়োজন হবে। আর, যদি আবেদনকারীর বয়স ২০০০ সাল বা তার আগে হয় সেক্ষেত্রে পিতা ও মাতার ভোটার আইডি নাম্বার প্রয়োজন হবে। কারো জন্ম যদি ২০০০ সাল বা তার পরে পরে এবং তার পিতা ও মাতার যদি জন্ম নিবন্ধন না থাকে তাহলে তার জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার আগে পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করে তাদের জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।
  • ঠিকানার প্রমাণপত্রঃ আবেদনকারীর জন্মস্থান কিংবা স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণ প্রয়োজন পড়বে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার জন্য। জন্মস্থান প্রমাণপত্র হিসাবে টিকা কার্ড, ডাক্তারের প্রত্যয়নপত্র, মেডিক্যাল রিপোর্ট ব্যবহার করা যাবে এবং অপরদিকে, স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসাবে বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানির বিলের কপি ব্যবহার করা যাবে।
  • প্রত্যয়ন পত্রঃ সংযুক্ত হিসাবে একটি প্রত্যয়ন পত্র যুক্ত করলে আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদনটি আরো মজবুত হবে। আপনার এলাকার কাউন্সিলার, মেয়র অথবা সিটি কর্পোরেশন থেকে আবেদন কারীর প্রত্যয়ন পত্র সংগ্রহ করা যাবে। এটি নিশ্চত করবে আবেদনকারী সেই এলাকার একজন বাসিন্দা।

এসকল তথ্য যদি জন্ম নিবন্ধন আবেদনকারীর থাকে তাহলে তার জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা যাবে। যদি না তাহলে তাহলে সেই আবেদনকারী জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবে না। তাই আবেদনের শুরুতে এসকল প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহ করে নিতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন আবেদন

আপনার কাছে যদি সকল তথ্য থেকে থাকে তাহলে আপনি জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার জন্য প্রস্তুত এবং নিম্নের সব গুলো ধাপ সম্পন্ন করলে আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদন সম্পন্ন হবে। তাহলে চলুন জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করা যাক।

ধাপ ১ঃ আবেদন করার পৃষ্টা খুলন

অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার জন্য নিম্নের বাটনে ক্লিক করুন। বাটনটিতে ক্লিক করার মাধ্যমে আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এছাড়া https://bdris.gov.bd/br/application ওয়েবসাইটে ভিজিট করে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করুন

ধাপ ২ঃ ঠিকানার ধরণ নির্বাচন করুন

ধাপ ২ঃ ঠিকানার ধরণ নির্বাচন করুন

আবেদন করার পৃষ্টা ওপেন করার পর আপনি উপরে ছবির মতোন একটি ইন্টারফেস দেখতে পারবেন। এই ধাপে আপনি নিম্নলিখিত কোন ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে চান? সেটিকে নির্বাচন করতে হবে। জন্মস্থান ও স্থায়ী ঠিকানা নামে দুইটি অপশন পাবেন। যদি জন্মস্থান দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে চান তাহলে জন্মস্থান আর যদি স্থায়ী ঠিকানা দিয়ে আবেদন করতে চান তাহলে স্থায়ী ঠিকানা নির্বাচন করে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করবে।

ধাপ ৩ঃ নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পরিচিতি ও জন্মস্থানের ঠিকানা পূরণ করুন

ধাপ ৩ঃ নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পরিচিতি ও জন্মস্থানের ঠিকানা পূরণ করুন

এই ধাপে যে ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন আবেদন করবে সেই ব্যক্তির অর্থাৎ নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পরিচয় পত্র ও জন্মস্থানের ঠিকানা প্রদান করতে হবে। আপনি উপরের চিত্রের মতোন একটি ফরম দেখতে পারবেন। ফরমটিতে যে সকল তথ্য চাচ্ছে সেসকল তথ্য দিয়ে ফরমটি পূরণ করে নিন। সবগুলো তথ্য নির্ভুলভাবে পূরণ করুন। সকল তথ্য যথাযথভাবে পূরণ করা শেষে একবার পুনরায় যাচাই করবে নিবে আপনার দেওয়া জন্ম নিবন্ধন তথ্যগুলো ঠিক-ঠাক আছে কি না। ফরম পূরণ শেষে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপে চলে যান।

ধাপ ৪ঃ পিতা ও মাতার তথ্য পূরণ করুন

ধাপ ৪ঃ পিতা ও মাতার তথ্য পূরণ করুন

এবার আপনাকে পিতা ও মাতার তথ্য পূরণ করতে হবে। এজন্য শুধু মাত্র জন্ম নিবন্ধন নাম্বার বা ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার ও জন্ম তারিখ প্রয়োজন। যদি নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির বয়স ২০০০ সালে আগে হয় তাহলে পিতা ও মাতার ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার লাগবে আর যদি নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির বয়স ২০০০ সাল বা তার পরে হয় তাহলে জন্ম নিবন্ধন নাম্বার লাগবে। পিতা ও মাতার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার বা ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার ও তারিখ বসিয়ে দিলে সার্ভার থেকে সংক্রিয়ভাবে পিতা ও মাতার নাম (ইংরেজি ও বাংলা), জাতীয়তা ইনপুট বক্সে পূরণ হয়ে যাবে। আপনাকে আলাদা করে পূরণ করতে হবে না।

পিতা ও মাতার তথ্য সঠিক ভাবে পূরণ করা শেষে আবারো পরবর্তী বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপের জন্য অগ্রসর হন।

ধাপ ৫ঃ স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা প্রদান

ধাপ ৫ঃ স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা প্রদান

এখান আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা প্রদান করতে হবে। যদি আবেদনকারীর জন্মস্থানের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই হয় তাহলে ঠিক বক্সে ক্লিক করবেন। আবার স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানাও যদি একই হয় সেক্ষেত্রেও এই অপশনে ঠিক দিয়ে দিবেন। যদি আলাদা হয় তাহলে আলাদা করে তথ্য পূরণ করতে হবে।

ধাপ ৬ঃ আবেদনকারীর প্রত্যয়ন বা সংযুক্তি আপলোড

ধাপ ৬ঃ আবেদনকারীর প্রত্যয়ন বা সংযুক্তি আপলোড

এবার আমাদেরকে আবেদনকারীর প্রত্যয়ন বা সংযুক্ত আপলোড করতে হবে। তবে তার আগে আবেদনাধীন ব্যক্তির সহিত সম্পর্ক নির্বাচন করতে হবে। এখান থেকে পিতা বা মাতা নির্বাচন করুন। সংযুক্তি হিসাবে কাউন্সিলার, মেয়র বা সিটি কর্পোরেশন থেকে সংগ্রহিত প্রত্যয়ন পত্র সংযুক্তিতে যুক্ত করতে পারেন। এছাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বা পানির বিলের কপি, মেডিক্যাল সার্টিফেকেট বা টিকা কার্ড ও সংযুক্তিতে যুক্ত করে পারে।

এসকল নথিপত্রগুলো ছবি (Image) আকারে আপলোড করতে হবে। ছবির সাইজ ২ এমবির বেশি হওয়া যাবে না এবং ছবি .png, .jpg, .jpeg ফরমেটের হতে হবে। সংযুক্তি আপলোডের পর অবশ্যই সঠিক সংযুক্তির ধরণ নির্বাচন করবেন। ধাপ সম্পন্ন হলে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করে পরের ধাপে চলে যান।

ধাপ ৭ঃ ইমেইল বা ফোন নাম্বার ভেরিফিকেশন ও আবেদন সাবমিট

ধাপ ৭ঃ ইমেইল বা ফোন নাম্বার ভেরিফিকেশন ও আবেদন সাবমিট

জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার জন্য এটি সর্বশেষ ধাপ। এই ধাপে গেলে আপনি আপনার সাবমিট করা সকল তথ্য দেখতে পারবেন। কি কি তথ্য সাবমিট করে এসেছেন তা সব কিছু পুনরায় চেক করে নিন। কোন তথ্য ভুল হলে তা সংশোধন করার অপশনও পাবেন কিন্তু সাবমিটের পর সেই অপশন আর পাবেন না। অনেকেই জন্ম নিবন্ধন নাম, ঠিকানার বানানে ভুল করে তাই তথ্য সাবমিটের যাচাই করে নিন।

যদি আপনার দেওয়া সকল তথ্য ঠিক-ঠাক থাকে তাহলে আপনার ইমেইল অথবা ফোন নাম্বার ভেরিফিকেশন করে নিন। যেকোন একটি ভেরিফিকেশন করলেই হবে। আপনি চাইলে ইমেইল ভেরিফিকেশন করে নিতে পারেন অথবা মোবাইল নাম্বার কিংবা দুটোই ভেরিফিকেশন করতে পারেন।

ভেরিফিকেশন করার জন্য ইমেইল বা মোবাইল নাম্বার দিয়ে ওটিপি পাঠান বাটনে ক্লিক করতে হবে। এর পর আপনার ইমেইল বা মোবাইল নাম্বারে একটি কোড চলে আসবে সেই কোডটি ওটিপি ইনপুট বক্সে বসাতে হবে।

এবার সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। সাবমিট বাটনে ক্লিক করলে আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে

ধাপ ৮ঃ প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ ও কিছু কথা

মূলত সাবমিট করার সাথে সাথে আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার সম্পন্ন হবে। কিন্তু আবেদন সম্পন্ন হওয়ার পরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রয়েছে। যেগুলো অবশ্যই আবেদনকারীর সম্পন্ন করে রাখা দরকার।

আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আপনি নিচের স্কিনশটের মতোন একটি ইন্টারফেস দেখতে পারবেন। এখানে আপনি থেকে আবেদনপত্র প্রিন্ট করে নিন এবং পাশাপাশি একটি তারিখ দেখতে পারবেন। সেখান লেখা থাকবে “আবেদন পত্রটি প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আগামী {এখানে তারিখ দেওয়া থাকবে} তারিখের মধ্যে নিবন্ধকের নিকট দাখিল করুন।” এখন আপনাকে উল্লেখিত তারিখের মধ্যে আবেদন পত্রটি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জন্ম নিবন্ধন অফিসে বা নিবন্ধকের নিকট জমা দিতে হবে। কোন কারণে আবেদনপত্র প্রিন্ট না হলে আবেদন নাম্বার নিয়ে নিবন্ধকের কাছে গেলেও হবে।

ধাপ ৮ঃ প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ ও কিছু কথা

এছাড়াও, ওই ইন্টারফেসে একটি আবেদন নাম্বার পাবেন। আবেদন নাম্বারটি সংরক্ষণ করে রাখুন। কেননা পরবর্তীতে জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট ও জন্ম নিবন্ধন আবেদন যাচাই করার জন্য এটি কাজে লাগবে এবং আপনি যদি জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট করে রাখতে চান তাহলে আবেদনপত্র প্রিন্ট বাটনে ক্লিক আবেদন পত্রটি প্রিন্ট করে নিন কিংবা পিডিএফ (PDF) আকারে আবেদনপত্রটি ডাউনলোড করে আপনার ডিভাইসে সংরক্ষণ করে রাখুন।

আপনার দেওয়া ফোন বা ইমেইলে আবেদন নাম্বার, লগিন আইডি ও পাসওয়ার্ড দফায় দফায় প্রেরণ করা হবে। আবেদন সাবমিট এর পর-পরই সাধারণত পাঠানো হয়ে থাকে যদি আসে তাহলে সেটিকে সংরক্ষণ করে রাখুন।


এভাবে সবগুলো ধাপ একে একে করার মাধ্যমে আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তারপর অবশ্যই উল্লেখিত তারিখের মধ্যে নিবন্ধকের নিকট আবেদন পত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আপনার আবেদন গ্রহণ করা হলে ফোনে এসএমএস অথবা ইমেইল করে জানানো হবে। পরবর্তীতে jonmonibondhonjachai.com ওয়েবসাইটে ভিজিট করে জন্ম নিবন্ধন যাচাই কপি প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন আবেদন সম্পর্কিত যদি আপনার কোন জিজ্ঞাসা থাকলে তাহলে কমেন্ট করে জানান। আমরা চেস্টা করব আপনার জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে।

“জন্ম নিবন্ধন আবেদন করুন [ধাপে ধাপে]”-এ 11-টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন